আদার রস খাওয়ার উপকারিতা ও কিভাবে খাবেন তা জেনে নিন
কি ভাবছেন? আদার রস কেন খাবেন? খেলে কি উপকার হবে? আজকে আপনাদের সব কিছু বিস্তারিত জানাবো......
আদার রস খাওয়ার উপকারিতা অনেক রয়েছে। আদা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যের প্রাচীন ও জনপ্রিয় উপাদান। এটি শুধু খাদ্যে স্বাদ বাড়ায় না , বরং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী।
প্রাচীনকাল থেকে রোগ প্রতিরোধ করার জন্য আদা ব্যবহার করা হয়েছে। কাঁচা, চা বা রান্নার ব্যবহার করা আদা হজম শক্তি বাড়ায়।শ্বাসকষ্ট, সর্দি -কাশি ,দূর করে। ব্যথা প্রদাহ দূর করে। রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে সাহায্য করে। আদা আমাদের জন্য অনেক উপকারী ।যা সহজেই পাওয়া যায় ও ব্যবহার সহজ।
✔ আদার রসের পুষ্টিগুণ।
✔ হজম শক্তি বৃদ্ধিতে আদার রসের উপকারিতা।
✔ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে আদার রসের কার্যকারিতা।
✔ ঠাণ্ডা- কাশি ও গলা ব্যথায় আদার রসের উপকারিতা।
✔ বমি ভাব ও বমি কমাতে উপকারিতা।
✔ প্রদাহ ও ব্যথার উপশমে আদার রস।
✔ রক্ত সঞ্চালনে ও হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক ভূমিকা।
✔ ওজন কমাতে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে উপকারিতা।
✔ সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
✔ উপসংহার।
আদার রস খাওয়ার ৩০ মিনিট পরে জিংক, ও ম্যাগনিসিয়াম রক্ত সঞ্চালনে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক ব্যাথা নাশক হিসেবে কাজ করে। এটা খেলে মাথা ব্যাথা কমে । এটি সেবনের ১ ঘন্টা পরে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল শরীরের রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে। মুখের রুচি বাড়ায়। আদার রস খেলে শরীরের পুষ্টি শোষণ বৃদ্ধি করে। নিয়মিত আদার রস খেলে হাড়ের জয়েন্টের ব্যাথা কমে। এটা এটা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। আদার রস খেলে শরীরের কষে গ্লুকোজের শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। আদার মধ্যে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের হরমোনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। ফলে যৌন চাহিদা বৃদ্ধি করে। আদা সেবনের ১ সপ্তাহ পর রক্তে কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমতে থাকবে।
আদা সেবনের ১৫ দিন পরে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে। ত্বকের বয়সের ছাপ কমবে এটি আদার গুনাগুনের মধ্যে অন্যতম। সেই সাথে লিভারকে শক্তিশালী করে তোলে আর আমাদের শরীরের ভিতরে ক্যান্সার জীবাণু গুলোকে ধ্বংস করবে। নিয়মিত ২১ দিন আদা সেবনের পর মাথার চুল পড়া কমে যাবে। এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, এবি, ও সি রয়েছে। সেই সাথে ত্বকে ব্রণ উঠা বন্ধ করবে। এবং ত্বককে মসৃণ ও উজ্জ্বলতা করে তুলবে। ৩০ দিন পর শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করবে। পাশাপাশি দাঁতের মাড়িকেও শক্ত করবে ও গ্যাস্ট্রিক কমাবে। এছাড়াও শরীরের অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা দূর করবে এবং কণ্ঠনালীকে সুরক্ষিত রাখবে।
আদার রস খাওয়ার পর প্রথমে আমাদের হজম ক্রিয়ায় এর কার্যকলাপ দেখানো শুরু করে। অর্থাৎ খাবার হজম করতে পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। সেই সাথে পেটের গ্যাসের সমস্যা হলে দূর করে। আদার রস খাওয়ার ফলে পাচক রস বৃদ্ধি করে , আদা পাকস্থলীতে পাচক রস নিঃসরণ বাড়ায় ফলে খাবার সহজে হজম হয় গ্যাস ও অম্বল কমায় খাবারের পর পেটে ফাঁপা ভাব আদার রস দূর করতে সাহায্য করে। খাবারের রুচি বাড়ায় হজম শক্তি দুর্বল হলে ক্ষুধা কমে যায় ।আদা ক্ষুধা বাড়ায় ,অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে ।অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি ও বুক জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে। তাই আদার রস আমাদের হজম শক্তির জন্য অনেক উপকার।
আদা শুধু হজম নয়, এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট , ভিটামিন ও খনিজ উপাদান শরীরকে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আদায় প্রচুর রয়েছে। যা শরীরকে ফ্রি- রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে । ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়। আদা ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়তা করে। এতে থাকা জিঞ্জেরল প্রদাহ কমিয়ে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা সক্রিয় রাখে । নিয়মিত আদা খেলে শরীর ক্লান্তি কাটিয়ে উজ্জীবিত থাকে। যা রোগ প্রতিরোধ অবস্থাকে সাহায্য করে । আদার চা, আদা লেবু পানি, বা কাঁচা আদা সামান্য খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারী।
ঠান্ডা কাশি ও গলা ব্যথায় আদার রস একটি প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে কাজ করে। এতে থাকা অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান শ্বাসনালী কে সুরক্ষা রাখে । আদার রস কফকে নরম করে গলা থেকে বের হতে সাহায্য করে। ফলে কাশি কমে যায়। আদার রস শরীর গরম রাখে এবং সর্দি জমাট বাঁধা কমায়। প্রদাহ নাশক গুণ গলার জ্বালা ও ব্যাথা কমায়। আদার রসের সাথে গরম পানি ও ১ চামচ মধু দিয়ে খেলে গলা ব্যথা ও কাশি দ্রুত কমে যায়। আদার রস শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে, কফ জমাট থেকে রক্ষা করে।
আদার ব্যবহার বহুকাল ধরে প্রাকৃতিক ওষুধ হিসেবে হয়ে আসছে। এটি বমির ভাব বা বমি কমাতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় নারীদের প্রাথমিক সময়ে যেসব বমি ভাব হয়, তা কমাতে সাহায্য করে। তবে ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া উচিত। ভ্রমণজনিত বমিতে আদা অনেকটা নিয়ন্ত্রন করে। ক্যান্সার রোগীদের , কেমোথেরাপি দেওয়ার পর রোগীদের বমি ভাব হয় এক্ষেত্রে আদা খুবই উপকারী। তবে যাদের আলসার এর সমস্যা আছে তাদের ডাক্তারের পরামর্শে খাওয়া ভালো।
আদা শুধু বমি ভাব কমায় না, বরং ব্যথার কাজেও অনেক সহায়তা করে। আদাকে প্রাকৃতিক ব্যথা নাশক ঔষধ বলা হয়। আদা নিয়মিত খেলে হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা, ফলা, শক্ত হয়ে যাওয়া কমাতে সাহায্য করে। অস্ত্রোপচার বা আঘাতের পর আদার রস তীব্র ব্যথাকে কমিয়ে ফেলে। দীর্ঘ সময় ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের পর যে পেশীতে ব্যথা হয় তা কমাতে সাহায্য করে। এবং মেয়েদের পিরিয়ডের সময় পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
আদার রস রক্ত সঞ্চালনে জন্য অনেক উপকার। আদার রস নিয়মিত খেলে ৩০ দিন পরে শরীরের রক্তশূন্যতা দূর করে হৃদপিণ্ডের কার্যক্রম ঠিক রাখে।ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। রক্ত সঞ্চালনে শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। উচ্চ রক্তচাপ কে নিয়ন্ত্রণ করে। হৃদরোগের প্রধান কারণ গুলোর একটি। ভালো সঞ্চালন ভালো সঞ্চালন রক্তে ক্লট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি কমায়। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক থেকে রক্ষা করে। শরীরে নানা রকম হরমোন রক্তের মাধ্যমে অঙ্গগুলোতে পৌঁছে যায় যা দেহের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। আদার এন্টি অক্সিডেন্ট হৃদপিন্ড কে অক্সিডেটিভ স্ট্রোস থেকে রক্ষা করে।
ওজন কমাতে আদার কার্যকর অপরিসীম। আদা সেবনের ১ সপ্তাহ পরে রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কমতে থাকে ,সেই সাথে শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমে যাবে। তাই ওজন কমানোর জন্য আদার রস অত্যন্ত উপকারী। নিয়মিত আদা খাওয়ার ফলে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে। তাই আদার রস ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অনেক উপকার।
আদার রস খাওয়ার নিয়মঃ
১। সকালে খালি পেটে ,এক চা চামচ আদার রস হালকা গরম পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যাবে।
২। খাবার আগে আধা কাপ কুসুম গরম পানিতে অল্প আদার রস মিশিয়ে খেলে হজমে সাহায্য করে।
৩। আদার রসের সাথে মধু ও কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে খাওয়া যাবে।
৪। আদা চায়ের সাথে খাওয়া যাবে।
আদার রস যেমন উপকারী। তেমনি অতিরিক্ত খেলে ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত
খেলে এসিডিটি বা বুক জ্বালা হতে পারে । যারা ব্লাড সুগার কমানোর ওষুধ খায় তারা
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আদার রস না খাওয়াই ভালো। গর্ভাবস্থায় আদার রস সীমিত
পরিমাণে খাওয়া উচিত। তবে অতিরিক্ত খেলে সমস্যা হতে পারে। যাদের আদা খেলে
এলার্জি হয় তাদের আদার রস না খাওয়াই উচিত।
ডায়াবেটিস রোগী বেশি আদা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা অতিরিক্ত কমে যেতে পারে। যাদের আলসার ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তাদের আদা বেশি না খাওয়াই ভালো। অতিরিক্ত আদার রস খেলে পাতলা পায়খানা হতে পারে। এবং কারো কারো হার্টবিট দ্রুত হতে পারে। তাই আদার রস পরিমাণে খেলে উপকার পাওয়া যায় ও অতিরিক্ত খেলে উল্টো ক্ষতি হয়।
আদার রস আমাদের শরীরের জন্য অত্যান্ত উপকারী । আদার রসে অনেক রকমের উপকার পাওয়া যায়। এটি রান্নাতেও খাওয়া যায়, আবার বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তাই এটি সঠিক নিয়মে অল্প পরিমাণে খেতে হবে তাহলে এটির গুণাগুণ পাওয়া যাবে।
🍀আপনাদের সবাইকে অনেক ধন্যবাদ। পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url