কাঁচা আমলকী খাওয়ার উপকারিতা

আজকে আমরা বিস্তারিত জানবো, কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা কি? এটা খেলে কি হবে? ও কিভাবে খাওয়া যাবে ?

আমলকি এমন এক ধরনের ফল, এটির দাম কম হলেও এর উপকারিতা অনেক। তাই এই আমলকি কে সুপার ফ্রুট বলা হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে এবং বিভিন্ন প্রকার সমস্যা তে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

আমলকি কে অমৃত ফল বলা হয়। কারণ এই টক জাতীয় ফল প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। রক্ত পরিষ্কার করে, খারাপ কোলেস্টেরল কমায়, হৃদযন্ত্র মজবুত রাখে, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চুলের গ্রোথ বাড়াতে, সুগার ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে,ও ওজন কমাতে অতুলনীয়  কাজ করে। আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অন্যান্য ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আমলকি কে বলা হয় স্বাস্থ্যের ভান্ডার। কারণ এটি শরীরকে ভেতর থেকে সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, নিয়মিত আমলকি খেলে শুধু শারীরিক শক্তি নয় , মানসিক সচেতাও ধরে রাখতে সাহায্য করে। 


☑ কাঁচা আমলকি খাওয়ার উপকারিতা

☑ কাঁচা আমলকি খাওয়ার শারীরিক সুবিধা

☑ আমলকি খাওয়ার সৌন্দর্য উপকারিতা

☑ আমলকি খাওয়ার সঠিক নিয়ম

☑ আমলকি খাওয়ার রোগ প্রতিরোধ সুবিধা 

☑ আমলকির হার্ট ও রক্ত সংক্রান্ত সুবিধা

☑ আমলকি খাওয়ার চোখ ও দৃষ্টি শক্তি সুবিধা

☑ সতর্কতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

☑ উপসংহার


 কাঁচা আমলকী খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন এ , ভিটামিন বি , ইত্যাদি। একটি গবেষণায় জানা গেছে, এক গ্লাস কমলালেবুর রসে যে পরিমাণ ভিটামিন সি পাওয়া যায়, ঠিক সেই পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে আমলকি রসে। তাই পৃথিবীর যেকোনো ফলের চেয়ে ভিটামিন সি প্রধান উৎস হিসেবে  আমলকির অবদান অতুলনীয়। আমলকির উপকারিতা   হলো  ওজন নিয়ন্ত্রণ করে, অ্যানিমিয়া দূর করে, আমলকি রসের ভিতরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায় অ্যানিমিয়া দূর হয় । অ্যানিমিয়া বেশি দিন চলতে থাকলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও সামান্য কাজে হাঁপিয়ে পড়া ,শরীর দুর্বল লাগা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায় । এ ক্ষেত্রে আমলকি অত্যন্ত উপকারী। লিভার টক্সিন দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, সুগার নিয়ন্ত্রণ করে নিয়মিত আমলকি খেলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।


কাঁচা আমলকি খাওয়ার অনেক রকম শারীরিক সুবিধা রয়েছে। যেমনঃ আমলকি খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এবং পচনতন্ত্র সুস্থ থাকে। গ্যাস অম্বল বা অর্জিন সমস্যায় সহায়ক। ওজন নিয়ন্ত্রণ। আমলকি ব্রেকফাস্ট বা পানিতে মিশিয়ে খেলে মেটাবলিজম দ্রুত হয় যা ওজন নিয়ন্ত্রণের সাহায্য করে ।আমলকিতে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় ত্বকে উজ্জ্বলতা ও মসৃণ করে। চর্ম রোগ থেকে রক্ষা করে । রক্ত শর্করা নিয়ন্ত্রণ আমলকি রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। আমলকিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোসকে ক্ষয় রোধে সাহায্য করে ফলে বার্ধক্য ধীর হয় । হারও জয়েন্টের স্বাস্থ্য আমলকি খেলে হাড় মজবুত হয় এবং অস্থির সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি কমে। আমলকি খেলে স্মৃতিশক্তি এবং মানসিকতা সতেজতা বৃদ্ধি পায়।


আমলকি শুধু স্বাস্থ্যের জন্যই নয় বরং সৌন্দর্য ও ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত খেলে সৌন্দর্যের জন্য যে সুবিধাগুলো পাওয়া যায় যেমনঃ আমলকিতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে যা ত্বকের কলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বককে মসৃণ উজ্জ্বল করে। আমলকির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ফ্রি রেডিকাল ক্ষয় রোধ করে ফলে ত্বকের বয়সের ছাপ কম দেখা যায়। এটি নিয়মিত খেলে ত্বকের ধুলা দাগ, ব্রণ চিহ্ন ও কালচে ভাব হ্রাস পায়। আমলকিতে থাকা ভিটামিন ও খনিজ চুলকে মজবুত ও ঘন করতে সাহায্য করে। চুল পড়া কমায় আমলকি খেলে ত্বক শুষ্ক হয় না প্রাকৃতিকভাবে কোমল ও নরম থাকে।


আমলকি সাধারণভাবে সারাদিনে ২-৩ টি ফল খাওয়া যায় । আমলকি রস হিসেবে না খেয়ে ফল হিসেবে চিবিয়ে খেলে আরো বেশি উপকার পাওয়া যায়। এর ফাইবার শরীরে যুক্ত হয় আর সুগারের রোগীদের জন্য যে কোন ফল চিবিয়ে খাওয়ায় পুষ্টিকর। সকালে খালি পেটে  খেলে সবচেয়ে উপকারী কারণ এতে হজম ভালো হয় এবং ভিটামিন সি শোষণ বেশি হয়। বিকেলে বা রাতে খাবার খাওয়ার পরে আমলকি খাওয়া যায়। আমলকি রস যদি খেতে চান তাহলে ১-২ চা চামচ প্রতিদিন খাওয়া যেতে পারে।


আমলকি খাওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । আমলকিতে ভিটামিন সি থাকায় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। সর্দি কাশির সময় রোগ প্রতিরোধ কার্যকর । আমলকি শরীরে লিউকোসাইট সাদা রক্তকণিকা কার্যক্ষমতা বাড়ায় যা শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ইনফ্লোমেন্টরি উপাদান থাকায় শরীরে প্রদাহ কমায়। লিভারের কার্যক্ষমতা উন্নত করে ফলে শরীরের টক্সিন নিঃসরণে সাহায্য করে। এটা খেলে হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে।


আমলকি খেলে হার্ট ও রক্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায় । আমলকির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রক্তনালীর প্রদাহ কমায় এবং রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। শরীরে টক্সিন দূর করে। আইরন শোষণ বাড়ায় ফলে অ্যানিমিয়া কমে যায়। রক্তকে শক্তিশালী ও সুষম রাখে । ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।


কাঁচা আমলকি খাওয়া চোখের ও দৃষ্টি শক্তির জন্য অনেক উপকার আছে। আমলকি ভিটামিন সি তে খুব ধনী । ভিটামিন সি চোখের লেন্স ও রেটিনার কোষকে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিক্যাল থেকে রক্ষা করে। যা চোখের বয়সজনিত সমস্যা যেমন ক্যাটারাক্ট কমাতে সাহায্য করে । নিয়মিত আমলকি খেলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কিছুটা উন্নতি পেতে পারে। বিশেষ করে কম আলোতে বা রাতে সময় ভালো দেখতে সাহায্য করে। চোখে লালচে ভাব ও জ্বালা ভাব দূর করতে অনেক উপকারী। এবং মস্তিষ্কে স্মৃতিশক্তি ভালো রাখে। 


আমলকি সাধারণভাবে নিরাপদ হলেও অতিরিক্ত খেলে কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। একবারে বা দিনে অনেক বেশি আমলকি খেলে পেট খারাপ বা এসিডিটি বমি ভাব হতে পারে । আর যাদের আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা রয়েছে তাদের অতিরিক্ত না খাওয়াই ভালো। আমলকি অতিরিক্ত খেলে রক্ত পাতলা হতে পারে। আমলকির স্বাদ টক হলেও এতে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে ডায়াবেটিস রোগীদের অবশ্যই পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হবে। বেশি টক খেলে দাঁতের এনামেল ক্ষয় হতে পারে তাই খাওয়ার পরে পানি দিয়ে মুখ ভালোভাবে ধুতে হবে। গর্ভাবস্থায় সীমিত পরিমানে খেতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া ঠিক নয়। কিছু মানুষের চামড়ায় এলার্জি বা ফুসকুড়ি হতে পারে। যাদের জটিলতা কোন সমস্যা রয়েছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খেতে পারেন।


আমলকি শুধু স্বাদে টক নয়, এটি চোখের জন্য প্রকৃত উপহার। ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ আমলকি চোখকে রক্ষা করে। দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়। এবং চোখের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ও পরিমিতভাবে খেলে চোখ সতেজ থাকে ,তবে অতিরিক্ত খাওয়া এড়ানো উচিত। সচেতন ব্যবহারের মাধ্যমে আমলকির সব উপকারিতা উপভোগ করা সম্ভব।


এই পোস্টটি ভালো লাগলে , অবশ্যই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন সবাইকে অনেক ধন্যবাদ।🍀







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url