ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়া কমানোর হেয়ার প্যাক তৈরি
আপনার চুল কি ঝরে পড়ছে ?! চুল কি পাতলা হয়ে যাচ্ছে?! চুলে কি খুশকি দূর হচ্ছে না?! কিভাবে চুল ঝরে পড়া বন্ধ করবেন ?? কিভাবে পাতলা চুলকে ঘন মজবুত করবেন ?? কিভাবে চুলের খুশকি দূর করবেন ?? সেগুলো সমস্যার সমাধান আজকে বিস্তারিত জানাবো......
ঘরোয়া পদ্ধতিতে হেয়ার প্যাক তৈরি বলতে বোঝায় প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি সেইসব মিশ্রণ বা প্যাক যা চুলের স্বাস্থ্য সৌন্দর্য ও পুষ্টি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি ঘরোয়া হেয়ার প্যাক চুলের যত্নে এক অনন্য ভূমিকা পালন করে।
বাজারের কেমিক্যাল যুক্ত বর্ণ গুলোর তুলনায় এগুলো বেশি নিরাপদ সাশ্রয়ী এবং দীর্ঘস্থায়ী ফলাফল পাওয়া যায়। প্রাকৃতিক তেল ও দই এর মত উপাদান গুলো চুলের গভীর ময়শ্চার যোগায়। এতে চুলের শুষ্কতা ও ভাঙ্গন কমে এবং চুলের কোমল ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
♦ চুলে আর্দ্রতা রক্ষায় ভূমিকা
♦ প্রাকৃতিক উপাদানের পুষ্টিগুণ ও গুরুত্ব
♦ কেমিক্যাল মুক্ত সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে ঘরোয়া প্যাক
♦ চুল পড়া ও খুশকি রোধে ঘরোয়া উপায়
♦ রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ও চুলের বৃদ্ধি করা
♦ চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও কোমলতা কিভাবে আনে
♦ সঠিক ব্যবহার ও নিয়মিত যত্নের পরামর্শ
♦ সর্তকতা ও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
♦ উপসংহার
চুলের সৌন্দর্য নির্ভর করে আদ্রতার উপর। চুলের আর্দ্রতা রক্ষা করা শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়। এটি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম শর্ত। চুলকে নরম ও উজ্জ্বল রাখে। চুলের ভেতরে স্তর যদি শুষ্ক হয়ে যায়। তবে সহজে ভেঙ্গে যায়। আর্দ্রতা চুলের গঠন মজবুত রাখে ফলে চুল কম ভাঙ্গে রুক্ষ হয় না।
চুলের ত্বক থেকে প্রাকৃতিক তেল চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। যা চুলকে পুষ্ট ও মসৃণ রাখে। আর্দ্রতা চুলের ভেতরের আর্দ্র ভাব ধরে রাখে । চুলকে নিস্তেজতা থেকে মুক্ত করে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। আর্দ্রতা চুলের উপরের স্তরের একটি সুরক্ষা পর্দা তৈরি করে যা পরিবেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে চুলকে রক্ষা করে।
প্রাকৃতিক উপাদানের পুষ্টিগুণ ও গুরুত্ব অনেক বেশি। চুল সুন্দর শক্ত ও উজ্জ্বল রাখতে প্রাকৃতিক উপাদান খুবই দরকার । এগুলো চুলে পুষ্টি দেয়। চুল ভাঙ্গা কমায় এবং চুলকে নরম করে। চুলে গভীরভাবে ঢুকে পুষ্টি দেয় নারিকেল তেল। চুল ভাঙ্গা বন্ধ করে শুষ্কতা কমায় এবং চুল নরম করে।
বাদাম তেল চুলের গোড়া শক্ত করে। চুল ঝলমলে ও মসৃণ করে। এতে ভিটামিন-ই থাকে। যা চুলের জন্য খুবই ভালো। আমলকি চুলের রং কালো করে। চুল পড়া কমায় ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। মধু চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে ।ফলে চুল শুকনো হয় না এবং উজ্জ্বল হয়।
অ্যালোভেরা চুলের ত্বক ঠান্ডা রাখে। খুশকি কমায় ও চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা আনে।
জবা ফুল ও ফুলের পাতা চুলকে কালো করে। পেঁয়াজের রস চুল গজাতে সাহায্য
করে দ্রুত ঘন ও লম্বা করে। মেথি চুলকে সিল্কি ও স্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল
করে। চা পাতার রস চুলের গোড়াকে মজবুত রাখে ফলে চুল পড়া দ্রুত কমে।
কেমিক্যাল মুক্ত ও সাশ্রয়ী সমাধান হিসেবে ঘরোয়া প্যাক তৈরি করা হলোঃ
১। মেথি , আমলকি, পেঁয়াজের রস, চা পাতার রস, অ্যালোভেরা, মেহেদি পাতা, জবা ফুল বা ফুলের পাতা, থানকুনি পাতা।
এগুলো ভালোভাবে পেস্ট বানাতে হবে। সেই পেস্ট চুলের মধ্যে লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রাখতে হবে। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুলকে পরিষ্কার করতে হবে। এতে চুল পড়া বন্ধ হবে।
আরও, একটি কেমিক্যাল মুক্ত প্যাক তৈরি করতে পারেন, ঘরোয়া ভাবে তৈরি করতে যেগুলো লাগবেঃ
২। মধু , পাকা কলা, গোলাপজল, টক দই , ডিম , অ্যালোভেরা।
এগুলো মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০-৩৫ মিনিট রাখতে হবে এরপর ভালোভাবে
শ্যাম্পু চুলকে পরিষ্কার করতে হবে।
চুল ঘন ও লম্বা হবে। চুলের গোড়া মজবুত করবে। এগুলোর সাধারণত বাসায় থাকে। তাই ঘরোয়া এই প্যাক গুলো বানানো অনেক সোজা ও সাশ্রয়ী। এই প্যাকগুলো বানিয়ে প্রতি সপ্তাহে ১/২ বার ব্যবহার করলে চুলের ভালো একটা ফলাফল পাওয়া যাবে। এই ২ টি প্যাক কেমিক্যাল মুক্ত ও প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। যার ফলে চুলের কোন ক্ষতি হবে না। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে দ্রুত চুলের সমস্যাগুলো সমাধান হবে।
চুল পড়া ও খুশকি রোধের ঘরোয়া উপায় হলোঃ
১। তেল ম্যাসাজ করুনঃ
বাদামে তেল, নারকেল তেল, বা অলিভ অয়েল তেল হালকা গরম করে। সপ্তাহে.২/৩ বার চুলের গোড়ায় লাগান। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করবে।দ্রুত চুল লম্বা হবে এবং খুশকি কমে যাবে।
২। কাঠ বাদাম ও টক দইয়ের প্যাকঃ
২ টেবিল চামচ দই + ১ চামচ বাদামের পেস্ট একসাথে মিশিয়ে চুলে ভালোভাবে লাগান।৩০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন । দইয়ে থাকা প্রোটিন এবং বাদামে থাকা ভিটামিন চুলকে মজবুত করে খুশকি দূর করে।
৩। প্রচুর পানি পান করা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াঃ
প্রোটিন , ভিটামিন-বি ,ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খাবেন। পর্যাপ্ত
পানি পান করবেন। এতে চুলের মূল থেকে স্বাস্থ্য বৃদ্ধি পাবে।
নিয়মিত এই প্যাকগুলো ব্যবহার করলে আপনাদের চুল পরা বন্ধ হবে এবং খুশকি
দূর হবে।
চুলের গোড়ায় রক্ত ভালো ভাবে পৌঁছালে চুলের পুষ্টি সহজে পাওয়া যায়। রক্তে থাকে প্রোটিন, ভিটামিন ও মিনারেল যেগুলো চুলের গোড়াকে শক্ত করে ফলে চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়। চুলকে লম্বা করতে হলে চুলের প্রতি নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
চুলকে পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিত প্যাকগুলো ব্যবহার করতে হবে। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে।চুলে ভালোভাবে তেল ম্যাসাজ করতে হবে। তাহলে চুলের গভীরে রক্ত সঞ্চালন ভালোভাবে হবে আর চুল দ্রুত লম্বা হবে।
চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ও কোমলতা আনে বিভিন্ন উপায়ে। ঘরোয়া পদ্ধতিতে কিছু প্যাক ব্যবহার করলে চুলের উজ্জ্বলতা ও কোমলতা ফিরে আসে। ঘরোয়া প্যাকগুলো চুলের জন্য নিরাপদ এতে কোন কেমিক্যাল থাকে না। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয় ঘরোয়া প্যাক।
ঘরোয়া প্যাক গুলো বানিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২/৩ বার ব্যবহার করলে খুব ভালো
একটা ফলাফল পাওয়া যায়। নিয়মিত প্যাক ব্যবহারের ফলে চুলে পুষ্টি পায় এবং চুল
দ্রুত লম্বা ঘন মজবুত হয়। এবং চুলের যতরকম সমস্যা আছে সব সমস্যার সমাধান
পাওয়া যায়। তাই চুলে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে উজ্জ্বলতা ও কোমলতা ফিরে
আসে।
হেয়ার প্যাক ব্যবহারের সঠিক নিয়মঃ
শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিবেন। প্যাক গুলো বানাবেন। চুলগুলো হালকা ভাবে শুকিয়ে নিবেন। এরপর চুলের গোড়ায় প্যাকটি ভালোভাবে লাগাবেন। ভালোভাবে ম্যাসাজ করবেন। ৫-১০ মিনিট। এরপর ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট প্যাকটি চুলে লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করবেন।
নিয়মিত চুলের যত্নের পরামর্শঃ
সপ্তাহে এক থেকে দুইবার প্যাক ব্যবহার করবেন। খুব বেশি ব্যবহার করলে চুলের তেল সুষমতা নষ্ট করতে পারে। তেল ম্যাসাজ করবেন। প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার নারকেল তেল বা বাদামের তেল দিয়ে ৫-১০ মিনিট হালকা ম্যাসাজ করবেন।
চুলের গোড়া পরিষ্কার রাখুন করতে নিয়মিত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুল রুক্ষভাবে
মুছবেন না হালকা তোয়ালে বা কটন কাপড় দিয়ে চেপে পানি বের করবেন। হেয়ার
স্ট্রেটনার বা কুন্ডলী ও হেয়ার ড্রায়ার কম ব্যবহার করবেন। বাদাম , ডিম,
মাছ সবজি চুলের জন্য পুষ্টিকর।
সতর্কতাঃ
হেয়ার প্যাক লাগানোর পরে বেশিক্ষণ ধরে রাখবেন না এতে চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। হেয়ার প্যাক চোখে গেলে চোখ লাল বা ঝাপসা হতে পারে তাই সাবধানে হেয়ার প্যাক লাগাবেন। নতুন প্যাক ব্যবহারের আগে হাতে বা কানের পিছনে ছোট একটি এলার্জি টেস্ট করবেন। কখনো কখনো সরাসরি কিছু উপাদান চুলের রং বা গন্ধ পরিবর্তন করতে পারে তাই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিবেন।
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াঃ
হেয়ার প্যাক প্রথমবার ব্যবহারের ফলে সাময়িক চুল ঝরা দেখা দিতে পারে। বেশি সময় বা অতিরিক্ত তেলযুক্ত প্যাক ব্যবহার করলে চুল রুক্ষ ও ভারী হতে পারে। ত্বকে চুলকানি বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। গন্ধ বা গরম ভাব হতে পারে।
হেয়ার প্যাক নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুলকে স্বাস্থ্যবান সৌন্দর্য মসৃণ
উজ্জ্বলতা রাখবে। এটি নিয়মিত ব্যবহার করলে এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে চুলের
রুক্ষতা, খুশকি ও চুল পড়া কমানো সম্ভব। সতর্কতা মেনে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার
করলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কম হয়। এবং চুলের গোড়া মজবুত হয়। এবং চুল দীর্ঘ
মেয়াদী সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
আপনাদের এ পোস্টটি ভালো লাগলে। অবশ্যই লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন। সবাইকে
ধন্যবাদ🍀

.webp)

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url